অকালে চলে যাবে, তবে কেন বেঁধেছিলে মায়ার বাঁধনে
প্রকাশিত : ২০:৪৯, ২১ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১২:৪০, ২২ জুলাই ২০১৮
রাজীব মীর। চট্টগ্রাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক। ওই বিষয়টি আমার কাছে গৌন। রাজীব মীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র এবং আমরা দু’জনই এসএম হলের ছাত্র। আত্মার আত্মীয় হতে আর বেশি কিছু দরকার ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের রীতি অনুযায়ি, সিনিয়র- জুনিয়র সবাই বন্ধুর মতো। সেই সুবাদে রাজীব ভাইও ছিলেন বন্ধু!! সব ধরণের আলাপ-পরামর্শ আমরা বড় এবং ছোটদের সঙ্গে করতাম অনায়াসে।
রাজীব ভাইয়ের এক বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ইয়ার মেট। প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় রাজীব ভাই এবং তার বোনেরা (সঙ্গে রাজীব ভাইয়ের আরেক ছোট বোনও থাকতো) আড্ডা দিতেন রোকেয়া হলের সামনে। বহুমাত্রিক আড্ডার আমিও প্রায়ই ঢুঁ দিতাম তাদের আড্ডায়। যেন ভাইবোনের আড্ডা।
রাজীব ভাই সিগারেট খেতেন না, তবে আমার সিগারেটের বিল দিতেন। আমি মাঝে মাঝে নিষেধ করতাম। তিনি বলতেন, যেহেতু তুমি খাও-ই, তাহলে আর বিল দিতে সমস্যা কি।
শিক্ষাজীবন শেষে রাজীব ভাই চলে গেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায়। আর আমি সাংবাদিকতায়। সামনা সামনি দেখা হওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। তারপরও কালেভদ্রে দেখা হতো। দেখা হলেই সেই মিষ্টি হাসি, মায়াভরা মুখ।
এরপর রাজীব ভাই যোগ দিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ব্যস্ততা দুইজনকেই নিষ্ঠুর করে দিলো। দেখা আর হয় না। কোথাও কোথাও মাঝে মাঝে দেখা। রাজীব ভাই বিয়ে করলেন, দাওয়াত দিলেন। অফিসের ব্যস্ততার কারণে যেতে পারলাম না।
এক বছরের বেশি সময় আগে সব শেষ রাজীব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা চন্দ্রিমা উদ্যানে। মর্নিং ওয়াকের সময় দু’জন মুখোমুখি। রাজীব ভাই আগেই একদিন বলেছিলেন, তিনি ধানমন্ডি লেকে হাঁটেন। আর আমি চন্দ্রিমা উদ্যানে। হঠাৎ চন্দ্রিমা উদ্যানে কেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন- আজ এইদিকে এসেছি। বললেন, আমার মেয়ে হয়েছে- জানো তো? আমি বললাম- বিয়ে কী এক বছর হয়েছে!! রাজীব ভাই উত্তর দিলেন- তোমার দুষ্টামি আর গেল না। আবার দু’জন হাঁটতে শুরু করলাম।
সেদিন কি জানতাম, এটাই শেষ দেখা। দু’জনের দু’টি পথ সত্যি সত্যি আলাদা হয়ে যাচ্ছে চিরদিনের মতো!! বিপরীত দিকে হাঁটার গতিতে যে দুরত্ব বাড়ছে, তা গড়াবে অসীমের পথে!!
অনন্তলোকে ভালো থাকবেন রাজীব ভাই। আপনার বহুমাত্রিক প্রতিভা আমাদের পথ দেখাবে। আপনার অবুঝ শিশুর যদি কোন কাজে আসতে পারি, তাহলে সেখানেই হবে সম্পর্কের স্বার্থকতা।
উল্লেখ্য শুক্রবার দিবাগত রাত ১.৩৭ মিনিটে ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজীব মীর। তিনি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত শনিবার তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।